জাতীয় পাট দিবসে প্রধানমন্ত্রী : পাট থেকে উৎপাদিত রপ্তানি পণ্যে প্রণোদনা দেবে সরকার


admin প্রকাশের সময় : মার্চ ১৪, ২০২৪, ২:৫৮ অপরাহ্ন /
জাতীয় পাট দিবসে প্রধানমন্ত্রী : পাট থেকে উৎপাদিত রপ্তানি পণ্যে প্রণোদনা দেবে সরকার

পাট থেকে উৎপাদিত রপ্তানি পণ্যে সরকার প্রণোদনা দেবে জা‌নি‌য়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হা‌সিনা ব‌লে‌ছেন, পাট দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপকভাবে কাজে লাগতে পারলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও বাড়বে।

 

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় পাট দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাট এমন এক পণ্য, যার চাহিদা শেষ হওয়ার নয়। দেশের সম্পদ খুবই সীমিত। কাজেই এটিকে কাজে লাগাতে হবে। পাট থেকে উৎপাদিত রপ্তানি পণ্যে প্রণোদনা দেবে সরকার। আমি পরিবেশবান্ধব এ পণ্যটিকে কৃষিজাত ও রপ্তানিমুখী পণ্যের স্বীকৃতি এবং প্রণোদনা দেব।

 

‘২০০৯ সালে আবার ক্ষমতা আসার পর পাট নিয়ে গবেষণার ওপর জোর দেওয়া হয়, যার কারণে পাটের জন্ম রহস্য উদ্ভাবন হয়। পাট ও পাটজাত পণ্যের উৎপাদন বাড়ানোতে আমাদের বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে; এটি আবিষ্কারে। ফলে পাটের গুরুত্ব বেড়ে গেছে। কাজেই সেই সবদিকে লক্ষ্য রেখেই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’

সরকারপ্রধান বলেন, পাটের সবকিছুই কাজে লাগানো যায়। পাটগাছ ও এটার আঁশ এবং পাতার বহুমুখী ব্যবহার হয় এখন। পাট ও চামড়ার সংমিশ্রণে বিভিন্ন পণ্য তৈরি হচ্ছে, সেগুলো বিদেশে রপ্তানিও করা হচ্ছে। আবার পাট শোলার ব্যবহার করে আসবাবপত্র বানানোতে গাছের ওপর নির্ভরতা অনেক কমেছে। যদিও পাটের খারাপ সময় আসে, যখন কৃত্রিম তন্তু আবিষ্কার হয়। কিন্তু মানুষ এখন সচেতন। যেহেতু পাট পরিবেশবান্ধব, তাই সেটিকে কীভাবে আরও উন্নত করা যায়, সেদিকে কাজ করা হচ্ছে।

 

‘দেশের সম্পদ খুবই সীমিত। কাজেই এটিকে কাজে লাগাতে হবে। পাট একসময় রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হত। আমাদের দেশে সবচেয়ে উন্নত মানের পাট হয়। যাকে সোনালি আঁশ বলা হয়। অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখতে পারে এটি। পাট দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপকভাবে কাজে লাগতে পারলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও বাড়বে।’

পাটজাত পণ্যের ব্যবহার আরও বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণে পাট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। পাট থেকে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে, সেই সুযোগটা কাজে লাগাতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, একটা সময় পাট শিল্পকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, এটা আমাদের জন্য ছিল খুবই অশুভ সংকেত। পাটকলগুলো শেষ করে দেয়নি সরকার, সেগুলো বেসরকারিকরণে প্রাণ ফিরেছে এ শিল্পে। পুরনো মিলের পাশাপাশি নতুন যন্ত্রপাতি কিনে বহুমুখী পণ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে।

 

পাটকলগুলো ইজারা দেওয়া প্রতিষ্ঠানকে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, নতুন মেশিনারিজ কিনে আরও নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন করতে হবে। যারা ইজারা নিয়েছেন পাটকল, তারা নজরদারিতে থাকবেন। সোনালি আঁশই সোনার বাংলা গড়তে সহায়তা করবে।

‘পাটের শাড়ি ছাড়া একসময় বিয়েই হতো না দেশে। এখন তো সেসব হারিয়ে গেছে। আমি নিজেও এখন যে শাড়িটা পরে আছি, সেটিও পাটের তৈরি। পাটের তৈরি পণ্যের প্রচার প্রয়োজন। বর্তমানে মার্সিডিজ বেঞ্জ, বিএমডব্লিউ’র মত গাড়ির ইন্টেরিয়রে লাইনার বানানো হয় পাট থেকে। অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখতে পারে এটি।’

 

সরকারপ্রধান বলেন, অনেক পাটকল অলাভজনক ছিল। সেগুলো বন্ধ করে দিয়ে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা দিয়েছি। সম্পূর্ণ নগদ টাকা হাতে দিইনি। পারিবারিক সঞ্চয় করে দিয়েছিলাম।

পাটের নতুন বাজার খোঁজার তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর 

 

পাটের নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন ও নতুন বাজার খোঁজার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পাটশিল্পকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, যা মোটেও শুভ ছিল না। পাটকলগুলোকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। পাটের জন্য রহস্য উদ্ভাবনের মাধ্যমে পাট ও পাট শিল্পের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার খুঁজতে হবে।

‘সোনালী আঁশ সোনালী দিনের হাতছানি দিচ্ছে, যথাযথ কাজে লাগাতে হবে। পরিবেশবান্ধব পণ্য হিসেবে পাট ব্যবহারে সুযোগ বেড়েছে। পাট থেকে উৎপাদিত রপ্তানি পণ্যে প্রণোদনা দেবে সরকার।’

সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের দেশের সম্পদ খুব সীমিত, পাট আমাদের দেশের একটি পণ্য। যে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হত। সে পাটকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছিলেন। পাট আমাদের এমন একটি পণ্য যা চাহিদা কখনো শেষ হবে না। পাটকে বলা হয় সোনালী আঁশ, এই সোনালী আঁশ আমাদের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখতে পারে।

‘বর্তমান যুগে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে পরিবেশবান্ধব পণ্যের, পাট তেমন একটি পণ্য। একদিকে পাট আমাদের কিছু পণ্য, অন্যদিকে পাট আমাদের ইন্ডাস্ট্রিয়ালের কাঁচামাল। এ দেশীয় পণ্যটা যদি আমার উপযুক্তভাবে ব্যবহার করতে পারি, তাহলে পাটই আমাদের জন্য অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে। দেশীয় বিভিন্ন কাজে আরও ভালোভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। পাটের কোনও কিছু ফেলে দেওয়া যায় না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে পাটের জন্মরহস্য উদ্ভাবন করেছি। তার ফলে পাটজাত উৎপাদন বাড়ানো আমাদের বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আবিষ্কারের ফলে পাটের গুরুত্ব বেড়ে গেছে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমার আজকে পদক্ষেপ নিচ্ছি। পাটের আঁশ বহুমুখী ব্যবহার হয়। পাটের আঁশ এবং চামড়া মিলে পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। সেগুলো বিদেশে রপ্তানি করতে পারছি।

পাট পরিবেশবান্ধব হওয়ায় সুযোগ বেড়ে গেছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, পাটশিল্প আরও উন্নত কীভাবে করা যেতে পারে, সেদিকে আমরা লক্ষ্য রাখছি। একদিকে গবেষণা অব্যাহত রাখা অন্যদিকে পাট থেকে আরও উন্নত মানের পণ্য উৎপাদন করা, সেদিকে আমরা বিশ্বাসের দৃষ্টি দিয়েছি। পার্টের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিভিন্ন সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।

‘পাটজাত পণ্য যত বেশি উৎপাদন বাড়াতে পারবো, দেশীয় কাজে যেমন লাগবে, রপ্তানি ক্ষেত্রে বিরাট দুয়ার খুলে দেবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে পাটের নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করা, কোন দেশে কী ধরনের পণ্যের চাহিদা আছে সেটা দেখা, সেই ধরনের পণ্য উৎপাদন করার দিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে।’

তিনি বলেন, আমাদের রপ্তানি পণ্য বাড়াতে গেলে সেখানে পাট এবং পাটের বহুমুখী পণ্য সেই ভূমিকা রাখতে পারে। সেই সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী ৬টি জুটমিল উদ্বোধন ঘোষণা করেন। অনুষ্ঠানে পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক ও পাট মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি গাজী গোলাম দস্তগীরসহ সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা এবং অংশীজন উপস্থিত ছিলেন।