কম্পিউটার অপারেটর নিলয় পারভেজ ইমন।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নামে জন্মসনদ তৈরির ঘটনায় পাবনার সুজানগর উপজেলার আহম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সচিবকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদের কম্পিউটার অপারেটর নিলয় পারভেজ ইমনের বিরুদ্ধে থানায় মামলার জন্য লিখিত এজাহার দায়ের করা হয়েছে।
শুক্রবার (২২ মার্চ) দুপুরে সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুখময় সরকার দুইজনকে শোকজ নোটিশ দেন। আর থানায় মামলার এজাহার দেন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-২ ফাতেমা বেগম।
সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুখময় সরকার বলেন, কিভাবে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নামে জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরি হলো তার কারণ জানতে চেয়ে আহম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মোল্লা ও সচিব আওলাদ হাসানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আগামী দুই কার্যদিবসের মধ্যে তাদের শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে জাস্টিন ট্রুডোর জন্মসনদ তৈরিকারী সেই কম্পিউটার অপারেটর নিলয় পারভেজ ইমনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও চারজনের বিরুদ্ধে আমিনপুর থানায় মামলার অভিযোগ দিয়েছেন ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান-২ ফাতেমা বেগম।
আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ বলেন, শুক্রবার দুপুরে মামলার জন্য এজাহার পাওয়া গেছে। মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এর আগে পুরো ঘটনা তদন্ত করতে রেজিস্ট্রার জেনারেল যাহিদ হোসেন পাবনা জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন।
জেলা প্রশাসক মু. আসাদুজ্জামান বলেন, রেজিস্টার জেনারেলের নির্দেশ পাওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ পাবনার উপ-পরিচালক সাইফুর রহমানকে ঘটনা তদন্ত করে তিন কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্তের পর দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো পেয়েছেন বাংলাদেশি জন্মসনদ। সেই জন্মসনদের কাগজ বলছে তিনি জন্মসূত্রে পাবনা জেলার নাগরিক। পাবনার সুজানগর উপজেলার আহম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তার নামে ইস্যু করা ভুয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ থেকে এই তথ্য বৃহস্পতিবার জানাজানি হয়। তারপর থেকে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদের দেওয়া জন্ম নিবন্ধন সনদে দেখা গেছে, জন্ম নিবন্ধন সনদটি ইস্যু করার তারিখ দেখানো হয়েছে ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি। যেখানে নিবন্ধিত ব্যক্তির নাম হিসেবে রয়েছে জাস্টিন ট্রুডো, পিতা পিয়েরে ট্রুডো, মাতা মার্গারেট ট্রুডো। জন্ম তারিখ রয়েছে ২৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১। জন্ম সনদের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার দেওয়া হয়েছে ১৯৭১৭৬১৮৩১৭০৩৫৫০৯।
অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে, জন্ম নিবন্ধনটির আসল ব্যক্তির নাম আজিজুল। সেখানে দেওয়া হয়েছে জাস্টিন ট্রুডোর নাম।
তার জন্ম সনদের প্রথম চারটি ডিজিট ছিল ২০০৪। আর সেটা পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে ১৯৭১। আর গেলো ১৯ মার্চ রাত ৯টা ৫১ মিনিটে পেমেন্ট হয়েছে। ৯টা ৫২ মিনিটে রিসিভ হয়েছে এবং রাত ৯টা ৫৪ মিনিটে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সেটি এপ্রুভও করেছে।
এই অপকর্মটি করেছেন আহম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের কম্পিউটার অপারেটর নিলয় পারভেজ ইমন। তার বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ দেওয়ার আরও অভিযোগ রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :