ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টারিয়াল বডি পুলিশের কাছে চারজনকে হস্তান্তর করেছে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে তোফাজ্জল নামের মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবককে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
গ্রেপ্তার চার শিক্ষার্থী হলেন- ফজলুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জালাল মিয়া (২৫), মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সুমন মিয়া (২১), পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মো. মোত্তাকিন সাকিন, ভূগোল বিভাগের আল হোসেন সাজ্জাদ এবং ওই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আহসান উল্লাহ ও ওয়াজিবুল আলম।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
তিনি বলেছেন, মরদেহের সুরতহাল এবং পোস্টমর্টেম সম্পন্ন হয়েছে। মরদেহ নিহতের আত্মীয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের স্থান পরিদর্শন করেছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টারিয়াল বডি পুলিশের কাছে চারজনকে হস্তান্তর করেছে। তাদেরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ ঘটনায় বিস্তারিত তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। যারা জড়িত, সবাইকে আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে।
কারা হত্যাকাণ্ড ঘটালো এবং ঘটনার সূত্রপাতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি, সন্দেহজনক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ওই যুবককে ফজলুল হক মুসলিম হলের গেস্টরুমে এনে মারধর করা হয়। এর পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে রাত পৌনে ১টার দিকে ওই যুবককে মৃত ঘোষণা করা হয়।
যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের রাজনৈতিক পরিচয় জানা গেছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি তদন্তাধীন বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদেরকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগকে দায়ী করেছে। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশকেও দায়ী করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে পুলিশের বক্তব্য কী? এমন প্রশ্নের জবাবে ডিসি তালেবুর রহমান জানান, কারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে এবং কী কারণে ঘটিয়েছে, সেটি তদন্তের বিষয়। আশা করি, তদন্তের মাধ্যমে সবকিছু বেরিয়ে আসবে। এ বিষয়ে ডিবির টিমও কাজ করছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে শাহবাগ থানায় আসামিদের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের সুপারভাইজার মোহাম্মদ আমানুল্লাহ।
মামলার এজাহারে মোহাম্মদ আমানুল্লাহ উল্লেখ করেন, ১৮ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ৮টার সময় একজন যুবক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের গেটে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র তাকে আটক করে প্রথমে ফজলুল হক মুসলিম হলের মূল ভবনের গেস্ট রুমে নিয়ে যান। মোবাইল চুরির অভিযোগ করে তারা ওই যুবককে এলোপাতাড়ি চর-থাপ্পড় ও কিল-ঘুষি মারেন। জিজ্ঞাসাবাদে ওই যুবক তার নাম তোফাজ্জল বলে জানান। পরে তিনি মানসিক রোগী বুঝতে পেরে তাকে হলের ক্যান্টিনে নিয়ে খাবার খাওয়ান। এরপর তাকে হলের দক্ষিণ ভবনের গেস্ট রুমে নিয়ে জানালার সঙ্গে হাত বেঁধে স্ট্যাম্প, হকিস্টিক ও লাঠি দিয়ে উচ্ছৃঙ্খল কিছু ছাত্র বেধড়ক মারধর করলে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। তোফাজ্জলের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠালতলী ইউনিয়নে।
আপনার মতামত লিখুন :