পবিত্র মাহে রমজান মাসকে সামনে রেখে রামগঞ্জ উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় গোস্ত ব্যবসায়ীরা যত্রতত্র গবাদিপশু জবাই ও হাটবাজারে ইচ্ছেমত চড়া দামে গোস্ত বিক্রি করছে। এ ব্যাপারে রামগঞ্জ পৌরসভা ও উপজেলা ইউনিয়ন পরিষদ গুলোর কর্তৃপক্ষ কোন প্রদেক্ষপ নিচ্ছে না। সরেজমিনে রামগঞ্জ গোস্ত বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি গরুর গোস্ত ২৫০ গ্রাম হাড় সহ ৭৫০,টাকা চর্বি ছাড়া ১০০০ টাকা, মহিসের গোস্ত ৮০০/ ৮৫০ শত টাকা ও ছাগলের গোস্ত ১২০০/১ ৩ ০০শ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে। রমজান মাস উপলক্ষে রামগঞ্জ পৌর পরিষদ ও উপজেলা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে গোস্ত বিক্রেতাদের নিয়ে এ যাবৎ কোন বৈঠকে গোস্তের মূল্য কমাতে পারেনি । এতে গোস্ত ক্রেতাদের মাঝে চাপা ক্ষোপের সৃষ্টি হয়।
শুধু তাই নয় রামগঞ্জ পৌর শহর ও উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন বাজার গুলোতে কসাইখানা থাকার পরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই যত্রতত্র নোংরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রোগাক্রান্ত গরু, মহিষ, ছাগল জবাই করছেন কসাইরা। কোন কোন সময় দোকান ঘরে ও সড়কের উপরই জবাই করা হয় এসব গবাদি পশু। এর পর ওইসব গবাদি পশুর গোস্ত চওড়া মূল্যে কৌশলে ক্রেতাদের গছিয়ে দিচ্ছেন। ফলে একদিকে যেমন পরিবেশ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে অন্যদিকে জনস্বাস্থ্য হুমকির সম্মুখিন হয়ে পড়েছে।
অভিযোগ উঠেছে সরকারি বিধি বিধানের তোয়াক্কা না করে কসাই ও মাংস বিক্রেতারা প্রতিদিন এ অনিয়ম করে যাচ্ছে। অথচ সরকারি বিধান মতে গোস্ত বিক্রির উদ্দেশ্যে কোন পশু জবাই করতে হলে সেটি জবাই করার পূর্বে সম্পূর্ণ রোগমুক্ত কিনা এবং গোস্ত স্বাস্থ্যসম্মত কিনা তা একজন সরকারি পশু ডাক্তার দ্বারা পরীক্ষা করে নিতে হবে। পরীক্ষা করা পশু জবাই ও খাওয়ার উপযোগী বিবেচিত হলে তবেই সেটি অনুমোদিত কোন কসাইখানায় নিয়ে জবাই করার বিধান রয়েছে। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিয়ম মোতাবেক গোস্তের উপর সীল মেরে তা বাজারে বিক্রয় করতে পারবে। অথচ রামগঞ্জ পৌরসভা সহ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের কোথাও এ বিধান মানা হচ্ছে না।
শুধু তাই নয়, এ অসাধু কসাইগন বাচ্চা, চাষাবাদযোগ্য বলদ ও দুধের গাভীও নিয়ম অমান্য করে জবাই করে গোস্ত বিক্র করছে । বছরের পর বছর প্রত্যক্ষ ভাবে এ অনিয়ম চলে আসলেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না এদের বিরুদ্ধে । জনমনে কতিথ আছে আইন প্রয়োগকারী কর্মতর্কাগন এবং তাদের প্রতিনিধি সর্বসময় এ অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ রাখেন বলেই কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না ।
সরকারি বিধি মোতাবেক কসাই পেশায় যারা রয়েছেন তাদেরও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জন থেকে স্বাস্থ্য সনদপত্র নেওয়া বাধ্যতা মূলক হলেও উপজেলার কয়েকটি হাটবাজারে মাংসের দোকানে সরেজমিনে পরিদর্শন কালে কসাইদের সাথে আলাপ কালে তারা এ সম্পর্কে জানেনা বলেই জানালেন এ প্রতিবেদককে ।
অন্যদিকে গবাদি পশু জবাই এবং মাংস কাটার যাবতীয় সরঞ্জাম ব্যবহারের পূর্বে জীবানুমুক্ত করা, খোলা গোস্ত বিক্রয় না করা এবং গোস্তের দোকানে স্যানিটেশনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখার নির্দেশনা থাকলেও উপজেলার হাটবাজারগুলোর কোন মাংস দোকানেই তা দৃশ্যমান পাওয়া যায়নি । এসব ব্যবসায়ীদের নিকট এ বিধি বিধান সম্পর্কে অদ্যবধি কোন প্রকার সচেতনতা মূলক বার্তা না আসায় এরা সকালে জবাই করা গোবাদি পশুর গোস্ত সারাদিন উন্মুক্তস্থানে নোংরা পরিবেশে গভীর রাত পর্যন্ত ঝুলিয়ে রেখে বিক্রয় করছে ।
পশু জবাইয়ের ক্ষেত্রে সরকারি বিধি মানার বিষয় তদারকির জন্য পৌরসভা সহ প্রত্যেক ইউনিয়নে একজন করে পশু ডাক্তার, একজন করে স্যানিটারী ইন্সপেক্টর এবং চামড়ার মান দেখার জন্য একজন অভিজ্ঞ কিউরেটর থাকলেও রামগঞ্জে এদের দেখা পাওয়া দায় হয়ে পড়েছে। ফলে সরকারি নিয়মানুযায়ী সপ্তাহে দুইদিন সোম ও বৃহস্পতিবার গোস্ত বিহীন দিবস হলেও রামগঞ্জের কসাইগনএ সম্পর্কেও জানেন না বলে জানিয়েছেন। মাংস বিত্রুয়ের ব্যাপারে এ উদাসহীনতার কারনে শহরের রাস্তার পাশে যত্রতত্র ব্যাঙের ছাতারমত গড়ে উঠেছে লাইসেন্স বিহীন গোস্তের দোকান । এরা গোস্ত বিক্রয়ের প্রতিযোগীতায় মহিষের গোস্তকে গরুর গোস্ত, টাটকা গোস্তের সাথে বাসি গোস্ত, বকরী ও পাঠার গোস্তকে খাসীর গোস্ত বলে বিক্রি করে গ্রাহকদের সাথে প্রতারনা করছে বলে ও অভিযোগ পাওয়া গেছে ।
পৌর স্যানিটারী ইন্সপেক্টর মোঃ আলমগীর কবিরের কাছে জানতে চাইলে তিনি পৌর কসাই খানা থাকার পরও দুই একজন ব্যতিত অন্যরা সরকারের বিধি-নিয়মকে উপেক্ষা করে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে যত্রতত্র পশু জবাই করে গোস্ত বিক্রয় করছেন বলে স্বীকার করেছেন । তিনি এ বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে অবহিত করে অচিরেই এদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন ।
মোঃআলমগীর হোসেন জয়
স্টাপ রিপোর্টার
আপনার মতামত লিখুন :