অন্তর্বর্তী সরকার সুষ্ঠু-অবাধ নির্বাচনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: ড. ইউনূস


admin প্রকাশের সময় : অগাস্ট ১৭, ২০২৪, ৫:৫৭ অপরাহ্ন /
অন্তর্বর্তী সরকার সুষ্ঠু-অবাধ নির্বাচনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: ড. ইউনূস

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, তার সরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক, বহুত্ববাদী গণতন্ত্র রূপান্তর নিশ্চিত করতে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

 

শনিবার (১৭ আগস্ট) তৃতীয় ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিটে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ কথা জানান তিনি।

মুহাম্মদ ইউনূস তার সরকারের লক্ষ্য বর্ণনায় বলেন, আমাদের কাজ এখন আমাদের নির্বাচনি ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, স্থানীয় সরকার, মিডিয়া, অর্থনীতি এবং শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করা।

এ সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, আমি আপনাদের শিগগিরই ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। অন্যথায় আপনি গুরুত্বপূর্ণ কিছু মিস করতে পারেন। ঢাকার বেশিরভাগ অংশ বিশ্বের গ্রাফিতির রাজধানীতে পরিণত হয়েছে। ১২ থেকে ১৩ বছর বয়সী তরুণ শিক্ষার্থী এবং শিশুরা ৪০০ বছরের পুরনো এই শহরের দেয়ালে ‘নতুন গণতান্ত্রিক’ পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশের চিত্র দিয়ে রাঙিয়ে তুলছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এর জন্য কোনও কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা বা নির্দেশনা নেই। কারও কাছ থেকে বাজেটের সমর্থন নেই। এটি ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’-এর লক্ষ্যগুলোর প্রতি তাদের আবেগ এবং অঙ্গীকারের বহিঃপ্রকাশ মাত্র।

 

২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেলজয়ী ইউনূস আহ্বান জানান, গ্লোবাল সাউথের জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তরুণ ও শিক্ষার্থীদের কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখার।

তরুণরা সমাজের সবচেয়ে ক্ষমতাধর অংশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ তরুণ। এরা সমাজের সবচেয়ে ক্ষমতাধর অংশ। তারা আলাদা। তারা একটি নতুন বিশ্ব গড়তে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তরুণ ও শিক্ষার্থীরা সক্ষম এবং প্রযুক্তিগতভাবে তারা আগের প্রজন্মের চেয়ে অনেক এগিয়ে।

তিনি বলেন, তারা সব অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে। তারা উদ্যোক্তা। তারা যে কাজ চায়, তা উপভোগ করার কারণে নয়, বরং অন্য কিছু পাওয়া যায় না। কারণ আমাদের সব দেশের শিক্ষাব্যবস্থা তাদের চাকরির জন্য প্রস্তুত করে।

তরুণরা সৃজনশীল সক্ষমতা ভুলে গেছে উল্লেখ করে মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, তারপরও সব মানুষই সৃজনশীল জীব হিসেবে জন্মগ্রহণ করে। তারা স্বভাবজাত উদ্যোক্তা। কিন্তু আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে শুধুমাত্র চাকরিপ্রার্থী তৈরি ও তাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য।

তিনি বলেন, আমাদের ব্যবস্থাটি পুনরায় সাজাতে হবে। তিনি আশা করেন যে, তারা গ্লোবাল সাউথে একসঙ্গে এটি করতে পারে। এটি দারুণভাবে সৃজনশীল তরুণ জনগোষ্ঠী সমৃদ্ধ।

ইতিহাসকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ১৯৫২ সালে মাতৃভাষার জন্য বাংলাদেশি ছাত্ররা প্রাণ দিয়েছিল। এটি সারা বিশ্বে মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকারের জন্য সংগ্রামকে অনুপ্রাণিত করেছিল। প্রায় সাত দশক পরে আমাদের ছাত্র-নেতৃত্বাধীন দ্বিতীয় বিপ্লব গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মর্যাদা, সমতা এবং অংশীদারত্বমূলক সমৃদ্ধির জন্য তাদের কণ্ঠস্বর উত্থাপন করতে গ্লোবাল সাউথজুড়ে যুবকদের অনুপ্রাণিত করছে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমি সবচেয়ে বয়স্ক ‘তরুণ’ হিসেবে এই বিপ্লবে অংশ নিতে পেরে এবং তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহায়তা করতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি। তাদের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। তাদের সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করি।

ভারতের নয়া দিল্লিতে তৃতীয় ভয়েস অব দ্য গ্লোবাল সাউথ সামিট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শুক্রবার (১৬ আগস্ট) ফোনালাপে সামিটে যোগ দেওয়ার জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আমন্ত্রণ জানান নরেন্দ্র মোদি। তখন আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি সম্মেলনে যোগ দিতে রাজি হন প্রধান উপদেষ্টা।

শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ঢাকা থেকে এই বৈঠকে যোগ দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, ফিজি, ওমান এবং ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরাও সম্মেলনে যোগ দেন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেওয়ার পর এটাই অধ্যাপক ইউনূসের প্রথম বহুপক্ষীয় কোনও অনুষ্ঠানে যোগদান। রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান পর্যায়ে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অধিবেশনটি সঞ্চালনা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।