কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ ২৯ পণ্যের দাম, নেই বাজার মনিটরিং


admin প্রকাশের সময় : মার্চ ১৮, ২০২৪, ১০:৪৯ অপরাহ্ন /
কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ ২৯ পণ্যের দাম, নেই বাজার মনিটরিং

বগুড়ার বাজারে মূল্য তালিকা টাঙিয়ে মুরগি বিক্রি করতে দেখা গেছে ব্যবসায়ীদের


নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগাম ধরতে পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার মতো সরকারি উদ্যোগ কাজে আসছে না বগুড়ায়। ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে পণ্যের দামের তালিকা বাজারে টাঙিয়ে বেচাকেনা করছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত বাজার মনিটরিং না থাকায় সরকার নির্ধারিত পণ্যের দামের তালিকা কাগজে-কলমে রয়ে গেছে।

 

সোমবার (১৮ মার্চ) সকাল থেকে শহরের কলোনী, ফতেহ আলী এবং রাজাবাজার ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

এর আগে, গত ১৫ মার্চ শুক্রবার সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মাসুদ করিম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে খুচরা বাজারে মাছ, মাংস, ডিম, ডাল ও সবজির মতো ২৯টি পণ্যের দাম নির্ধারণ করা হয়।

 

 

 

সরেজমিনে শহরের কয়েকটি বাজারে দেখা গেছে, সোমবার প্রতিকেজি সোনালি মুরগি সরকার নির্ধারিত দর ২৬২ টাকার বদলে ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন ২৯০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগি ১৭৫ টাকা ৩০ পয়সার জায়গায় বগুড়া শহরের সব বাজারে বিক্রি হতে দেখা গেছে ২০০ টাকা কেজিতে। গরুর মাংস প্রতি কেজি ৬৬৪ টাকার স্থলে বিক্রেতারা বিক্রি করছেন ৭৫০ টাকায়।

 

এদিকে, সরকার ৯৮ টাকা বেঁধে দিলেও প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকায়। এমনিভাবে প্রতি কেজিতে ৩৩ থেকে ৩৫ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে মুগডাল ও মাসকালাই। মসুর ডাল ও খেসারি ডালও মিলছে না বেঁধে দেওয়া দামে। সরকার নির্ধারিত দামে বেশিরভাগ সবজিই মিলছে না দোকানগুলোতে। মসলার বাজারে অবস্থাও একই রকম। আদা প্রতি কেজি ১৮০ টাকার স্থলে বিক্রি হতে দেখা গেছে ২০০ টাকায়। রশুন বিক্রি হচ্ছিল ১২০ টাকার স্থলে ১৬০ টাকায়।

শহরের ফতেহ আলী বাজারে পণ্য কিনতে আসা তানী নামের এক ক্রেতা বলেন, সত্যি বলতে যে দাম বেঁধে দিয়েছে সরকার সেটা আসলে কোথাও নেওয়া হচ্ছে না। যে বাজারেই যান সবখানেই দাম বেশি। ফতেহ আলী বাজারে দাম এক রকম আবার খান্দার বাজারে আরেক রকম দাম। কোথাও দাম কমার কোনো চিহ্ন নেই। বাড়তি দামই নেওয়া হচ্ছে ক্রেতাদের কাছ থেকে। পণ্যের যে দাম চলছে এখন সেটা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।

সাজেদুর রহমান নামের অপর ক্রেতা বলেন, বাজারে সব পণ্যের দামই বেশি। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে পণ্য বিক্রি হবে, দাম কমবে বলে মনে করেছিলাম। কিন্তু, সরকারি দামে তো  তো কোথাও পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। আমরা যারা সাধারণ মানুষ, তাদের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের কোনো সঙ্গতি নেই। আমাদের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামেই পণ্য বিক্রির দাবি জানান এই ক্রেতা।

 

বগুড়ার মালগ্রামের পেয়ারা বেগম। তিনি বিধবা। বাজারে এসে এই ক্রেতা বলেন, মাছ-মাংস বা মুরগির কেনার সামর্থ্য নেই বলে ফতেহ আলী বাজারে মুরগির পা কিনতে এসেছি। কিন্তু পায়েরও দাম বেশি। তাই পা না কিনেই ফিরে যাচ্ছি। বগুড়ার ফতেহ আলী বাজারে প্রতি কেজি মুরগির চামড়া ১২০, পাখা ১৬০, গিলা ১৮০ আর ব্রয়লার মুরগির পায়ের কেজি ২৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

 

মুদি দোকানি মো. মিলন হোসেন বলেন, দাম কমানোর পর একটি মাত্র কোম্পানি ছাড়া অন্য কোনো কোম্পানির তেল আমরা পাচ্ছি না। ছোলা-বুট আমাদের কেনাই পড়ছে ১০৩ টাকা। আমরা তো ১০৫ টাকাতেই বিক্রি করবো। আমরা যেখান থেকে মাল কিনি তারা যদি দাম না কমায় তাহলে আমরা কীভাবে কম দামে বিক্রি করবো?

মুরগি ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তার বলেন, কোম্পানি যা রেট দিছে তার ওপর ভিত্তি করে আমাদের মাল বিক্রি করতে হয়। আমরা তো সরাসরি কোনো ফার্ম থেকে মুরগি কিনি না। আমরা কিনি কোম্পানির মাধ্যমে। কোম্পানি যদি রেট কম দেয় তখন কম হবে। সরকার নির্ধারণ করেছে ঠিক আছে, কিন্তু কম দামের জন্য সরকারকে কোম্পানিকে বলতে হবে। তারা দাম কমালেই আমরা কম দামে বিক্রি করতে পারবো।

 

গরুর মাংস বিক্রেতা নূর আলম বলেন, গরু কেনাই পড়ছে আমাদের কেজি প্রতি ৭০০ টাকার বেশি দামে। সেখানে ৬৬৪ টাকা কেজিতে আমরা কিভাবে বিক্রি করবো? কম দামে বিক্রি করলে এই টাকা ভর্তুকি কে দেবে? সরকার বেঁধে দিলেই তো আমরা মাংস বিক্রি করতে পারবো না। দোকান বন্ধ রাখতে হবে তাহলে। হাটে গরুর দাম বেশি। ১ লাখ টাকার গরু ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। মাংসের বাজারের জন্য নতুন করে দাম নির্ধারণ করা উচিত। কারণ, যে দাম বেঁধে দিয়েছে সরকার সেই দামে বিক্রি করা কখনই সম্ভব না।

বগুড়া ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ইফতেখারুল ইসলাম রিজভী বলেন, আমরা মনিটরিং করছি। যেহেতু, মাত্র মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে, এর মধ্যে অনেক খুচরা বিক্রেতা এই মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি জানেও না। অনেক পাইকারও জানে না। এটা বাস্তবায়নে আরো ২-৩দিন সময় লাগবে। এরপরে যদি কেউ সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে পণ্য বিক্রি না করে তবে, কঠোর আইন বাস্তবায়ন করা হবে।

বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের বাজার মনিটরিং অব্যাহত আছে। সদরে চার জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছেন। বাকি উপজেলাগুলোতে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট অ্যাসাইন করে দেওয়া আছে রোজার আগের দিন থেকেই, প্রতিটি উপজেলায় বাজার মনিটরিং করার জন্য। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের মধ্যে লিফলেটও বিতরণ করা হয়েছে। ফেস্টুন দিয়ে দেবো বিভিন্ন বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সরকার যেভাবে দিয়েছে সেটা বাস্তবায়ন করার জন্য।

বিক্রেতারা তো সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করছে না, তারা বলছে তাদের কেনা বেশি পড়ছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক বলেন, কেনা বেশি পড়ছে এটা তারা শুধু বললে তো হবে না, আমাকে বুঝিয়ে দিতে হবে। কোথায় বেশি রাখছে, কারা বেশি রাখছে। যে বেশি রাখছে তার বিরুদ্ধেই আমরা ব্যবস্থা নেবো।