‘ঘুষে’র টাকা ফেরতের দাবিতে শিক্ষকের মরদেহ নিয়ে বিক্ষোভ


admin প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ৫, ২০২৪, ৪:১৪ অপরাহ্ন /
‘ঘুষে’র টাকা ফেরতের দাবিতে শিক্ষকের মরদেহ নিয়ে বিক্ষোভ

ঘুষের টাকা ফেরতের দাবিতে সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে রোকেয়া বেগম (৫৫) নামের এক শিক্ষকের মরদেহ নিয়ে বিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেন স্বজনরা। বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক আগামী তিন দিনের মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করলে লাশ নিয়ে বিদ্যালয় ত্যাগ করেন তারা। পরে ওই শিক্ষকের দাফনের ব্যবস্থা করা হয়। সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে উপজেলার গোদাগাড়ী চকপাড়া গাড়াবের বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ঘটনা এটি।

 

মারা যাওয়া শিক্ষক রোকেয়া বেগম উপজেলার গাড়াবেড় গ্রামের খয়ের উদ্দিনের মেয়ে। তিনি জিসিজি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাধ্যমিক শাখার ইংরেজি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন।

স্বজনরা জানান, এমপিওভুক্তির কথা বলে বিদ্যালয়ের সভাপতি কাজিপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান দ্বীন মোহাম্মদ বাবলু এবং প্রধান শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম দফায় দফায় শিক্ষক রোকেয়ার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নেন।

 

শিক্ষক রোকেয়া বেগমের ভাই মিজানুর রহমান বলেন, ১৯৯৮ সালে গোদাগাড়ী চকপাড়া গাড়াবেড় বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে রোকেয়া বেগম ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। দীর্ঘদিন ধরে এমপিওভুক্তির কথা বলে প্রধান শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দ্বীন মোহাম্মদ বাবলু রোকেয়ার কাছ থেকে দফায় দফায় প্রায় কয়েক লাখ টাকা নেন। সম্প্রতি রোকেয়া বোর্ডে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখেন তার এমপিওভুক্তি হয়নি। ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে যোগ দিলেও বোর্ডে গিয়ে জানতে পারেন তাকে সমাজ বিজ্ঞান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বোর্ড থেকে ফিরে এসে রোকেয়া সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে ঘুষের টাকা ফেরত চান। টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করায় টেনশনে গত (৩০ জানুয়ারি) আমাদের বাড়িতে রোকেয়া স্ট্রোক করেন। তাকে ঢাকার নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সোমবার সকালে তিনি  মারা যান। মৃত্যুর পর তার লাশ এলাকায় আনা হলে স্বজনরা লাশ নিয়ে স্কুল মাঠে বিক্ষোভ করেন। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

 

রোকেয়া খাতুনের স্বামী আব্দুল করিম বলেন, বিদ্যালয়ের ঘর করার কথা বলে আমার স্ত্রী ও আমার কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা নেন প্রধান শিক্ষক ফরিদুল। এরপর আমি সেখান থেকে সরে আসলেও আমার স্ত্রী ঠিকই থাকে। বেতন করে দেওয়ার কথা বলে পরে দফায় দফায় চার লাখ টাকা নিয়েছে তারা। কিন্তু বেতন করে দেয়নি। এই শোকে আমার স্ত্রী মারা গেলেন।

কাজিপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল মজিদ বলেন, মরদেহ নিয়ে বিক্ষোভ হচ্ছে এমন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে গিয়ে জানতে পারি, মারা যাওয়া শিক্ষকের নিয়োগ বৈধ হয়নি। তার কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে। শিক্ষকের মরদেহ নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন স্বজনরা। ঘটনাস্থলে ইউএনও সাহেব উপস্থিত ছিলেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, রোকেয়ার টাকা দিয়েই আমরা বিদ্যালয়ের ঘর উঠাই। বেতন করে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন সময় টাকাও নিয়েছি। আমরা রোকেয়ার ৪ লাখ টাকা ফেরত দেব আগামী ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে।

 

এ বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ বাবলু বলেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং মীমাংসা হয়ে গেছে। স্বজনরা লাশ নিয়ে গেছেন।

কাজীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, শিক্ষকের লাশ নিয়ে বিদ্যালয়ে অবস্থানের খবরে ঘটনাস্থলে যাই। প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের সভাপতির সঙ্গে কথা বলি। তারাও টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তারা বলেছেন, আগামী তিন দিনের মধ্যে চার লাখ টাকা ফেরত দেবেন।

 

তিনি বলেন, মারা যাওয়া শিক্ষকের নিয়োগের কোনো কাগজপত্রই দেখাতে পারেননি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। পরবর্তীতে কাগজপত্র দেখে আমরা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করবো। তারাই যাবতীয় ব্যবস্থা নেবেন।