ভাষা সৈনিকের স্মৃতিবিজড়িত মঞ্চ ভেঙে পাবলিক টয়লেট


admin প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ৪, ২০২৪, ৪:১৪ পূর্বাহ্ন /
ভাষা সৈনিকের স্মৃতিবিজড়িত মঞ্চ ভেঙে পাবলিক টয়লেট

একজন ভাষা সৈনিকের স্মৃতি বিজড়িত মুক্ত মঞ্চ ভেঙে সেখানে নির্মাণ করা হলো পাবলিক টয়লেট। এমন অভিযোগ উঠেছে পাকশী পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

 

স্থানীয়রা বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ করলেও কর্ণপাত করেননি রেল কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে চলছে সমালোচনার ঝড়।

সত্তর এর দশকে ঈশ্বরদী পুরাতন বাস টার্মিনালে রেলের পরিত্যক্ত জায়গায় নির্মাণ করা হয় মুক্তমঞ্চ। নামকরণ করা হয় ‘ভাষা সৈনিক মাহবুব আহমেদ খান স্মৃতি মুক্তমঞ্চ’।

 

মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং তৎপরবর্তীকালে সকল রাজনৈতিক দলের আন্দোলন-সংগ্রাম, সভা-সমাবেশ এ মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাশাপাশি সামাজিক-সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান এই মুক্ত মঞ্চে অনুষ্ঠিত হতো। এ কারণে ঈশ্বরদীর মানুষের আবেগ, অনুভূতি, পুরনো অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই মঞ্চটিকে ঘিরে।

 

হঠাৎ করেই ২০২৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পাকশী রেলওয়ে বিভাগীয় ম্যানেজার শাহ সুফি নূর মোহাম্মদের নেতৃত্বে এ মঞ্চসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি দোকানপাট উচ্ছেদ করা হয়। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ মঞ্চ না ভাঙার অনুরোধ জানালেও তা ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে একই বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ভাষা সৈনিকের নামে নির্মিত মঞ্চের স্থানে আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) সেই আধুনিক পাবলিক টয়লেটের উদ্বোধন করা হয়েছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) অসিম কৃমার তালুকদার। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, পাকশী রেলওয়ে বিভাগীয় ম্যানেজার শাহ সুফি নূর মোহাম্মদসহ রেলওয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।

 

টয়লেট উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঈশ্বরদীর কোনো জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তাকে দেখা যায়নি।

 

সংশ্লিষ্ট তথ্যে জানা যায়, ২০২৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ভাষা সৈনিক মাহবুব আহমেদ খানের নামে নির্মিত মুক্তমঞ্চ ভেঙে ফেলার পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরদিন ৯ ফেব্রুয়ারি মঞ্চ ভাঙার প্রতিবাদে ঈশ্বরদীর সচেতন যুবসমাজের ব্যানারে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেন। এসময় বক্তারা দ্রুত মঞ্চ নির্মাণ করার অনুরোধ জানান। পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা মঞ্চ পুণঃনির্মাণের দাবি জানান।

এতে রেল কর্তৃপক্ষ কোন কর্ণপাত করেননি। বরং ২৩ ফেব্রুয়ারি ভাষা সৈনিকের নামে তৈরি মঞ্চের স্থানে পাবলিক টয়লেট নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। এতে আরো বেশি ক্ষুব্ধ হন ঈশ্বরদীর রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সকল স্তরের মানুষ। তারা তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।

 

বীরমুক্তিযোদ্ধা আ.ত.ম শহিদুজ্জামান নাসিম বলেন, ‘ভাষা সৈনিকের নামে নির্মিত মঞ্চ ভেঙে সেখানে পাবলিক টয়লেট নির্মাণের ঘটনাটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। একজন বীরমুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বাধীন দেশে এ ধরনের একটি ন্যাক্কারজনক কাজ দেখতে হবে তা ভাবতে পারিনি। এখানে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ না করে আশেপাশে রেলের অসংখ্য পরিত্যক্ত জায়গা ছিলো সেখানে টয়লেট নির্মাণ করতে পারতো। এ মঞ্চ ভেঙে ফেলার পর আমি নিজেও রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি এবং এখানে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ না করে ৫০ গজ দূরে অথবা আশপাশের রেলের পরিত্যক্ত জায়গায় নির্মাণের দাবি জানিয়েছিলাম কিন্তু তারা কর্ণপাত করেননি। এটি আমাদের ঈশ্বরদীবাসীর জন্য কলঙ্ক ও দুঃখের বিষয়।’

ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নায়েব আলী বিশ্বাস বলেন, ‘এ মঞ্চের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঈশ্বরদীর রাজনীতির নানা স্মৃতি। দলীয় বড় বড় জনসভার পাশাপাশি এখানে সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক নানা অনুষ্ঠান হতো। এ মঞ্চ ভেঙে ফেলার ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আরো বেশি কষ্ট পেয়েছি এখানে পাবলিক টয়লেট নির্মাণের কথা শুনে। এ বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তারা কর্ণপাত করেননি।’

এ বিষয়ে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক শাহ সুফী নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনকে আধুনিকীকরণের জন্য স্টেশন সংলগ্ন রেলের পরিত্যক্ত জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এখানে একটি মঞ্চ ছিলো এটিও উচ্ছেদ করা হয়। পরবর্তীতে রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখানে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা হয়েছিল ভেঙে ফেলা মঞ্চের আশেপাশে একটি মঞ্চ নির্মাণ করা হবে। সেটির বিষয়ে আলোচনা চলমান রয়েছে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এখন আবার দাবি জানাচ্ছেন পুরাতন মঞ্চের আশেপাশে মঞ্চ না করে খায়রুজ্জামান বাস টার্মিনাল রেলগেট এলাকায় একটি মঞ্চ নির্মাণের। সংসদ নির্বাচনের পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হবে বলে আশা করছি।’