নির্বাচন বাতিল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবিতে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। কর্মসুচি হলো—মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) ও বুধবার (১০ জানুয়ারি) দেশব্যাপী গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ।
সোমবার (৮ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল বলেছেন, ‘৭ জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণ ভোট না দিয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার আর কোনো নৈতিক অধিকার নেই। আমি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে প্রহসনের নির্বাচন বাতিল করে অবিলম্বে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবিতে ৯ জানুয়ারি মঙ্গলবার ও ১০ জানুয়ারি বুধবার দেশব্যাপী গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি ঘোষণা করছি। ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিজ নিজ অবস্থান থেকে স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সংগঠনের সর্বস্তরের জনশক্তি ও দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।’
নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে জামায়াত
৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ নির্বাচনকে প্রহসনের নির্বাচন আখ্যায়িত করে এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। নির্বাচন বাতিল করে অবিলম্বে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে দলটি।
সোমবার গোপন স্থানে সংবাদ সম্মেলন করে জামায়াতের আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান এ দাবি জানান।
এ সময় দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমির আবদুর রহমান মুসা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মুজিবুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশে জনগণের ন্যায্য ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই চলছে। গণতন্ত্র হত্যাকারী বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার গত ১৫ বছর যাবত অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে আছে। তারা ক্ষমতা প্রলম্বিত করার লক্ষ্যে এবারও প্রহসনের নির্বাচনের আয়োজন করে। আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন দ্বারা একটি সাজানো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। জামায়াতে ইসলামীসহ প্রায় সকল বিরোধী রাজনৈতিক দল ঘোষিত তফসিল প্রত্যাখ্যান করে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানায় এবং নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করতে থাকে। সরকার বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে ৭ জানুয়ারি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা নবায়নের ষড়যন্ত্র করে। কিন্তু, বাংলাদেশের জনগণ জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের ডাকে সাড়া দিয়ে প্রহসনের নির্বাচন বর্জন করে ও ভোটদান থেকে বিরত থাকে। সরকারের হুমকি-ধামকি অগ্রাহ্য করে জনগণের এই সাহসী ও দৃঢ় সিদ্ধান্তে আমি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দেশবাসীকে আন্তরিক মোবারকবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। জনগণের এ ভূমিকা বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
‘আমরা বারবার বলে আসছি যে, কেয়ারটেকার সরকার ব্যতীত দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বিশেষ করে, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে দেশের জনগণ ভোট দিতে যায়নি। ১৫৪টি আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় দলীয় প্রার্থীদের নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী জাতির সামনে ওয়াদা করেছিলেন, এটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন, শীঘ্রই আরেকটি নির্বাচন হবে। কিন্তু, তিনি তার ওয়াদা রক্ষা করেননি। ২০১৮ সালেও তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহ তার কথায় আস্থা রেখে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু, আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রশক্তি ব্যবহার করে ভোটের আগের রাতেই ব্যালট বাক্স ভর্তি করে রাখে এবং দিনের বেলায় ভোটের নামে প্রহসন করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জাতীয় সংসদ, সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদসহ কোনো নির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি।’
মুজিবুর রহমান বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ১৮ মাস আগে থেকে কেয়ারটেকার সরকার গঠন করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে জাতির সামনে বক্তব্য তুলে ধরা হয়। প্রায় সকল বিরোধী দল নির্বাচনে কেয়ারটেকার সরকারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়। কিন্তু, সরকার পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী বিরোধী দলকে নির্বাচনের বাইরে রেখে প্রহসনের নির্বাচনের আয়োজন করে। জনগণ প্রহসনের এই নির্বাচন বর্জন করার মাধ্যমে মূলত কেয়ারটেকার সরকারের প্রতি তাদের অবস্থান ব্যক্ত করেছে।
নির্বাচনের খণ্ডচিত্র তুলে ধরে জামায়াতের আমির বলেন, সকাল ১১টা পর্যন্ত দলীয় দু’-একজন লোক ব্যতীত ভোট কেন্দ্রে কাউকে দেখা যায়নি। ৭ বছরের শিশুকে দিয়ে ভোট দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। বহু কেন্দ্রে আনসার সদস্যদের ভোট দিতে দেখা গেছে। অনেক আসনে ভোট গণনার আগেই রেজাল্ট সিট প্রস্তুত করা হয়েছে। ভোট কেন্দ্রে টাকা দিয়ে ভাড়াটে লোক এনে লাইনে দাঁড় করানো হয়েছে এবং টাকা লেনদেনের দৃশ্য গণমাধ্যমের ক্যামারায় ধরা পড়েছে। ভোটার উপস্থিতি না থাকায় শাসক দলীয় লোকেরা নির্বিঘ্নে গণহারে জাল ভোট দিয়েছে। বুথের বাইরে জনসমক্ষে সিল মারার ঘটনা দেখা গেছে। ভোটের ফল ঘোষণার সময় নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হচ্ছে ২৮ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে, পেছনের দিক থেকে বলা হচ্ছে ৪০ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে। এ দৃশ্য বিভিন্ন মিডিয়ায় দেখা দেখা গেছে।
এই নির্বাচনে জনগণের ৩ হাজার কোটি টাকা নষ্ট করা ছাড়া জনগণের কোনো কল্যাণ হয়নি, দাবি করে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির বলেন, এটি কোনো নির্বাচনই নয়। যেহেতু, জনগণ এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি, সুতরাং এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই। আমরা দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে প্রহসনের নির্বাচন বাতিল করে অবিলম্বে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আহ্বান জানাচ্ছি। দেশের জনগণ নির্বাচন বর্জন করে ও ভোটদান থেকে বিরত থেকে যে ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে সরকার জনগণের দাবি মেনে নিয়ে শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবেন বলে আমরা আশা করি।
আপনার মতামত লিখুন :