জলবায়ু বদলের ভয়ঙ্কর প্রভাবের প্রতিনিধি


admin প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ১৪, ২০২৪, ৬:০৯ পূর্বাহ্ন /
 জলবায়ু বদলের ভয়ঙ্কর প্রভাবের প্রতিনিধি

এক নজরে দেখে ভুল হতে পারে। মনে হতে পারে একজন মানুষ পাখি সেজেছে। যেন কোনো ছদ্মবেশী। সত্যিকার অর্থে এ হলো হিংস্র এক পাখি। নাম হার্পি ঈগল। এই পাখি মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, ব্রাজিলের বৃষ্টিঅরণ্যে-অঞ্চলে বসবাস করে। এছাড়া পাপুয়া নিউগিনিতে হার্পিদের দেখা মেলে। তবে আমেরিকান হার্পি আর পাপুয়ান হার্পিদের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য আছে।

সম্প্রতি ফেসবুকে হার্পি ঈগল নিয়ে চর্চা বেড়েছে। এই পাখির ছবি নিয়ে মানুষ বিভ্রান্ত। হার্পি ঈগলের ছবি দেখে অনেকেই ভাবছেন সেগুলো পাখি নয়। কেউ কেউ মন্তব্য করছেন পাখির বেশে এ হলো কোনো মানুষ। কেনো বলবে না? ছবিতে দেখেছেন তো-আকারে এরা এতটাই বড় যে পাখি ভাবতে তিন বার ভাবতে হবে!

হার্পি পাখিবিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা যায়, একটা সময় এই বিশাল ঈগলদের উপস্থিতি শুধুমাত্র গল্প-কথাতেই ছিল। ১৭৫৮ সালে সুইডিশ জীববিজ্ঞানী কার্ল লিনেয়াস তার বই ‘সিস্টেমা নেচার’-এ প্রথম এই হার্পিদের অস্তিত্বের কথা বলেন। সেখানে এই পাখির নাম দেন ‘ভালচার হার্পিজা’। এই হিংস্র প্রকৃতির ঈগল শিকার ধরায় অত্যন্ত দক্ষ। ক্রেস্টেড ঈগল ও নিউ গিনি হার্পি ঈগলদের সঙ্গে এদের মিল থাকলেও স্বভাবে এরা আরও বেশি ক্ষিপ্র এবং শক্তিশালী।

এই হার্পি ঈগলদের মধ্যে স্ত্রী হার্পিরা আকারে একটু বেশি বড় হয়ে থাকে। এদের ওজন সবচেয়ে বেশি। পুরুষ হার্পিরা তুলনায় ছোট, ওজন ১-৫ কিলোগ্রামের মতো হয়ে থাকে। দৈর্ঘ্যে এরা ৩ ফুটের মতো হয়। ডানা ছড়ালে ৫-৭ ফুট পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। জীববিজ্ঞানীরা বলেন, হার্পি ঈগলের বাসা নাকি দূর থেকেও দেখা যায়। প্রায় ১.২ মিটার জায়গা নিয়ে এরা বাসা বানায়।

হার্পি পাখি শিকারে পারদর্শীহার্পি ঈগলের শিকার দক্ষতার কথা একবাক্যে মেনে নিয়েছেন জীববিজ্ঞানীরা। নিজের ওজনের থেকেও বেশি ওজন  তুলে নিয়ে যেতে পারে তারা। হার্পিরা শিকার করে পেল্লায় বাঁদর, হনুমান, হরিণ, পাখি এবং অন্যান্য ছোটখাটো প্রাণী। শিকারের তালিকায় সাপ তো রয়েছেই। আমেরিকার একদল জীববিজ্ঞানী ২০০৩-০৫ সাল পর্যন্ত বৃষ্টিঅরণ্যে হার্পি ঈগলদের নিয়ে গবেষণা চালিয়েছেন। আমাজন, ব্রাজিলের নানা জায়গায় ঘুরে হার্পিদের বসবাসের জায়গা ও তাদের শিকার ধরার কৌশল খুঁটিয়ে দেখেছেন তারা। এরপর জানিয়েছেন, পায়ের ধারালো নখে শিকারকে বিঁধে নিয়ে অনেক সময় ধরে আকাশে উড়তে পারে হার্পিরা। এরপর নখ ও বাঁকানো ঠোঁট দিয়ে ছিঁড়ে-খুবলে খায় শিকার। স্ত্রী হার্পিদের হিংস্রতা পুরুষদের থেকে অনেক বেশি। এই হার্পিদের নিশানায় থাকে ম্যাকাও পাখিরাও।

হার্পি পাখির সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এই পাখি পানামার জাতীয় পাখি। ২০০৯ সালে ইউনাইটেড নেশনস ক্লাইমেট চেঞ্জ কনফারেন্সের সময় বেলিজের রিও ব্রাভো সংরক্ষণ কেন্দ্রে একটি হার্পিকে ঠাঁই দেওয়া হয়।  জলবায়ু বদলের ভয়ঙ্কর প্রভাবের প্রতিনিধি করা হয়েছিল সেই পাখিটাকে।