মধ্য আফ্রিকার দেশ ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো (ডিআর কঙ্গো) থেকে শান্তিরক্ষা মিশন গুটিয়ে নিচ্ছে জাতিসংঘ। ২০২৪ সালের শেষ দিকে শান্তিরক্ষা মিশনের সব সদস্য দেশটি ছেড়ে যাবে। মিশন প্রধান বিন্টো কেইতা গতকাল শনিবার এ ঘোষণা দিয়েছেন।

 

আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, কঙ্গোতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনটি মনুস্কো নামে পরিচিত। জাতিসংঘের এই মিশনের প্রধান বিন্টো কেইতা শনিবার কঙ্গোলিজ রাজধানী কিনশাসায় এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘গত ২৫ বছরের উপস্থিতির পরে মনুস্কো নিশ্চিতভাবেই ২০২৪ সালের শেষের দিকে ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো ত্যাগ করবে।’

সম্প্রতি নির্বাচন হয় কঙ্গোয়। বিতর্কিত এ ভোটে পুনঃনির্বাচিত হয় কঙ্গোলিজ সরকার। পরে সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের মিশনকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এরপরই মনুস্কোর পক্ষ থেকে কঙ্গো ছেড়ে যাওয়ার ঘোষণাটি এলো।

 

অ্যালাইড ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস (এডিএফ), এম২৩-সহ অসংখ্য সশস্ত্র গোষ্ঠী দেশটির উত্তর কিভু, দক্ষিণ কিভু এবং ইতুরি প্রদেশের মতো অশান্ত পূর্বাঞ্চলে সক্রিয় রয়েছে। এসব অঞ্চলে বেসামরিক মানুষ ব্যাপক সহিংসতা এবং বাস্তুচ্যুতির সম্মুখীনও হয়েছে। সশস্ত্র এসব গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ২০ বছরের বেশি সময় ধরে লড়াই করে আসছিল জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের সেনাদল।

মোট তিন ধাপে সেনা প্রত্যাহার করা হবে। কেইতা জানিয়েছেন, প্রথম পর্যায়ে এপ্রিলের শেষ নাগাদ জাতিসংঘের প্রায় দুই হাজার সৈন্য দক্ষিণ কিভু ছেড়ে যাবে। এতে করে বর্তমানে ১৩ হাজার ৫০০ জনের শক্তিশালী মনুস্কো বাহিনীর সৈন্য সংখ্যা কমে ১১ হাজার ৫০০ জনে নেমে আসবে। দক্ষিণ কিভুতে জাতিসংঘের ১৪টি ঘাঁটি কঙ্গোর নিরাপত্তা বাহিনী দখলে নেবে। এরপর উত্তর কিভু এবং ইতুরি প্রদেশ থেকেও মনুস্কো বাহিনী চলে যাবে।’

 

কঙ্গোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টোফ লুতুন্ডুলা রাজধানী কিনশাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে নিশ্চিত করেছেন, জাতিসংঘের অবশিষ্ট বাহিনী আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে দেশ থেকে বেরিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মনুস্কো প্রত্যাহারের অর্থ এটা নয় যে, আমরা আমাদের দেশের স্বার্থে যে লড়াইয়ে নেমেছি তা শেষ হয়ে যাবে। বরং আমাদের সংগ্রাম চলবেই।’

২০১০ সাল থেকে ডিআর কঙ্গোতে নিরাপত্তাহীনতা প্রশমিত করতে সাহায্য করার জন্য মনুস্কো কাজ শুরু করলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের উপস্থিতি ক্রমশ অজনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। ২০২২ সাল থেকে মনুস্কো মিশন দেশটির নাগরিকদের প্রতিবাদের সম্মুখীন হয়ে আসছে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, শান্তিরক্ষীরা বহু বছরের মিলিশিয়া সহিংসতার বিরুদ্ধে বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে।

 

কঙ্গোলিজ সরকার পূর্ব আফ্রিকান একটি আঞ্চলিক বাহিনীকেও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের মতো একই কারণে দেশটি ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করার জন্য গত বছর ওই বাহিনীকে মোতায়ন করা হয়েছিল।