রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান। কাজীপাড়ায় ভাড়া বাসায় থাকতেন এক ছেলে, এক মেয়ে এবং স্ত্রীকে নিয়ে। ছেলেটি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। ছেলের স্কুলে ছুটি থাকায় পরিবার নিয়ে নেত্রকোনায় গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন মিজানুর। বেড়ানো শেষে আবার জীবিকার তাগিদে নেত্রকোনা থেকে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে করে ফিরছিলেন ঢাকায়। সেই ট্রেনে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে বড় ক্ষতি হয়ে গেছে মিজানুর রহমানের। তিনি এখন বাকরুদ্ধ। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে বসে আছেন স্ত্রী আর তিন বছর বয়সী মেয়ের লাশ নেওয়ার জন্য। কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। অধিক শোকে পাথর হয়ে গেছেন মিজান। কারো সঙ্গেই কথা বলছেন না। শুধু আপন মানুষ কাছে পেলেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখছেন।
মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে কী ঘটেছিল? প্রশ্ন শুনেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন মিজান। অস্পষ্ট স্বরে বলেন, ‘ভাই, ওরা আমার সুখের সংসার শেষ করে দিলো। আমার কলিজার টুকরা মেয়েটাকে মেরে ফেললো। আগুনে কয়লা হয়ে গেছে আমার মেয়েটা। মেয়েটার মুখ দেখার সাহস পাচ্ছি না।’ আর কিছুই বলতে পারছিলেন না মিজান। হাউমাউ করে কেঁদে হাসপাতালে ফ্লোরেই লুটিয়ে পড়লেন তিনি।
মিজানের চাচাতো ভাই শহীদুল্লাহ পলাশ জানান, সকাল ৭টায় ট্রেনে আগুন লাগার খবর পান তারা। ছুটে যান তেজগাঁওয়ে। সেখান থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসেন। মর্গে এসে দেখেন তার ভাইয়ের স্ত্রী আর তিন বছরের মেয়ের পুড়ে কয়লা হওয়া লাশ।
তিনি বলেন, মিজানের পরিবারসহ আরও কয়েকজন আত্মীয় ছিলেন ওই ট্রেনে। তারা আগুন আর ধোঁয়া দেখতে পেয়ে ট্রেন থামার সাথে সাথে নেমে পড়েন। মিজান তার ছেলেকে নিয়ে ট্রেন থেকে নামতে পারলেও তার স্ত্রী পপি ধোঁয়ায় কারণে কিছু দেখতে পাননি। মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরেই পুড়ে মারা যান তিনি।
আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে, সে বিষয়ে জানতে পেরেছেন কি না? প্রশ্নে জবাবে পলাশ বলেন, এখন কারো মনের অবস্থা ঠিক নেই। যতটুকু জানতে পেরেছি, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস বিমানবন্দর স্টেশন ছাড়ার পর খিলক্ষেত এলাকায় ট্রেনে আগুন এবং ধোঁয়া দেখা যায়। যাত্রীদের চিৎকারে চালক তেজগাঁও স্টেশনে ট্রেন থামান। ধোঁয়ার মধ্যে হুড়াহুড়ি করে নামতে গিয়ে অনকে আহত হয়েছেন। আমার ভাইয়ের বউ আর নামতে পারেননি।
এ ঘটনায় আহত হামিম গ্রুপের অ্যাডমিন অফিসার নুরুল হকও একইরকম বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, ট্রেনে ধোঁয়া আর আগুন দেখে সবাই ভয় পেয়ে যান। ধোঁয়ায় কিছু দেখা যাচ্ছিল না। তাড়াহুড়া করে নামতে গিয়ে জখম হয়েছি।
শহীদুল্লাহ পলাশ বলেন, এরকম অগ্নিসন্ত্রাস এই সোনার বাংলায় তো আমার চাই না। স্বাধীনতার মাসে এরকম ঘটনা ধিক্কার জানাই। রাজনৈতিক কর্মসূচির বলি কি সাধারণ মানুষ হবো? আমরা স্বজন হারিয়েছি। আমরা জানি, আমাদের ব্যথা কী!
আপনার মতামত লিখুন :