জাবির মীর মশাররফ হলে রাতভর র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ


admin প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ৭, ২০২৩, ৭:০৮ পূর্বাহ্ন /
জাবির মীর মশাররফ হলে রাতভর র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হলের গণরুমে মধ্যরাত থেকে শুরু করে রাতভর র‍্যাগিং করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার (৬ ডিসেম্বর) রাত ১টার দিকে র‌্যাগিং শুরু হয়।

জানা গেছে, ঘটনার সূত্রপাত গতকাল বুধবার রাত একটায়। হলের গণরুমে ৫০ ব্যাচের (২০২০-২১ সেশন) দ্বিতীয় বর্ষের ৮-৯ জন শিক্ষার্থী হঠাৎ করে ৫১ ব্যাচের (২০২১-২২ সেশন) প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের ফরমাল হয়ে লাইনে দাঁড়াতে বলে। এরপর তারা শিক্ষার্থীদের উপর চড়-থাপ্পড়, লাথি-ঘুসি ও পানি ঢেলে দিয়ে নির্যাতন শুরু করেন।

এ ঘটনায় ৫০ ব্যাচের দর্শন বিভাগের ফয়সাল মারুফ ও প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের শুভাশিষ জড়িত ছিলেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এর আগে গত আগস্টে মারুফের বিরুদ্ধে দুই শিক্ষার্থীকে গণরুম থেকে তুলে নিয়ে মারধরের অভিযোগ ওঠে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মীর মশাররফ হোসেন হলের গণরুমে অবস্থানকারী প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘মধ্যরাতে হলের ৫০ ব্যাচ (২০২০-২১ সেশন) ৮-৯ জন সিনিয়র হঠাৎ করে আমাদের গণরুমে এসে ফরমাল হয়ে লাইনে দাঁড়াতে বলেন। এসময় রসায়ন ৫১ ব্যাচের আকাশকে চড় মারেন দর্শন ৫০ ব্যাচের মারুফ ভাই। এরপর ভুগোল ও পরিবেশ বিভাগের নাইমকে মারুফ ভাই চড় মারেন ও প্রাণরসায়ন বিভাগের শুভাশিষ ভাই বুকের মধ্যে সজোরে লাথি মারেন। নাইম তখনই অসুস্থ হয়ে পড়ে।’

তারা আরও বলেন, ‘কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়লেও তারা র‍্যাগিং থামাননি। আমাদের সবাইকে লাইন করে দাঁড় করিয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের আশরাফুলকে ও প্রাণীবিজ্ঞানের রিফাতকে একাধিকবার চড় থাপ্পড় মারা হয়। তখন অসুস্থ দুইজনকে শুয়ে থাকা অবস্থায় সারা শরীরে পানি ঢেলে দেন মারুফ ভাই। এক ঘন্টার বেশি সময় আমাদেরকে মুরগি, চেয়ার, বানরের মতো বানিয়ে নানা কায়দায় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়।’

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের নাইমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘গতকাল আমাদের গণরুম হয়েছে। আমি ভাইদের কথার সঠিক জবাব দিতে না পারায় আমাকে বকাঝকা করেছে এবং গালি দিয়েছে।’ এ কথা বলেই ফোন কেটে দেন তিনি। পরক্ষণেই কল ব্যাক করে তিনি বলেন, ‘আমি গতকাল রাতে হলে ছিলাম না।’ 

জানতে চাইলে প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের রিফাত মুঠোফোনে গণরুমে র‍্যাগিং হয়েছে স্বীকার করেন এবং পরক্ষণেই কল কেটে দেন। তবে ঘটনা পুরোপুরি অস্বীকার করে মারুফ বলেন, ‘আমাদের হলে গত ৫-৬ মাস কোনো গণরুম হয় না, গতকালও হয়নি। আমি গতকাল হলে ছিলাম না। রাতে ক্যাম্পাসের বাইরে ছিলাম। সকালে ক্যাম্পাসে এসেছি।’

তবে গতকাল রাতভর গণরুমে চিৎকার চেঁচামেচি ও গালাগালি শুনতে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন গণরুম সংলগ্ন কক্ষের বাসিন্দারা। মারুফ গণরুমে উপস্থিত থেকে নির্যাতনে অংশ নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা।

মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাব্বির আলম বলেন, ‘এ ঘটনায় আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। তবে লিখিত না পেলেও আমি বিষয়টা খতিয়ে দেখবো। আমার কাছে ভূগোল বিভাগের ছেলেরা আজ এসে বলেছিল তাদের হল এলোটমেন্ট চেঞ্জ করে দেয়ার জন্য। এ থেকে আন্দাজ করেছি, হয়তো রাতে তাদের সঙ্গে কিছু হয়েছে। আমি বিষয়টি পুরোপুরি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিবো।’

উল্লেখ্য, জাবির হলগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করেও গণরুম বন্ধ করা যায়নি। জাবির হলের গণরুমে র‍্যাগিংয়ের ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। তবে জাবি প্রশাসন র‍্যাগিং সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে ব‌্যর্থ হয়েছে।

র‌্যাগিংয়ের ঘটনায় শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা র‍্যাগিং বন্ধের দাবি জানান। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জাবি প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।