কিউইদের মাটিতে দাপুটে জয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস


admin প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ২৭, ২০২৩, ১২:২৫ অপরাহ্ন /
কিউইদের মাটিতে দাপুটে জয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস

সংক্ষিপ্ত স্কোর
নিউ জিল্যান্ড: ১৩৪/৯ (২০ ওভার)

 

বাংলাদেশ: ১৩৭/৫ (১৮.৪ ওভার)

ফল: বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী। 

 

ম্যাচসেরা: শেখ মেহেদী হাসান

ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টিতে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের মাটিতে জয়ের দেখা পেলো বাংলাদেশ। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে কিউইদের ৫ উইকেটে হারায় বাংলাদেশ। বল হাতে নিউ জিল্যান্ডকে কম রানে আটকে আসল কাজটা করে দিয়েছিলেন বোলাররা। এবার দায়িত্ব ছিল ব্যাটারদের। ছোট ছোট জুটি আর ইনিংসে বাংলাদেশ এগোচ্ছিল। মাঝে হৃদয়-আফিফ পরপর আউট হলে কিছুটা চাপ পাড়ে। টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়ায় রিভিউতে লিটনের রক্ষা পাওয়া। এক প্রান্তে উইকেট পড়লেও অপর প্রন্তে ধরে রেখে খেলছিলেন লিটন। তিনি ওপেনিংয়ে নেমে মাঠ ছাড়েন বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করে। তার ব্যাট থেকে আসে সর্বোচ্চ ৪২ রান। তাকে দারুণ সঙ্গ দেন মেহেদী। ষষ্ঠ উইকেটে দুজনে মাত্র ২৫ বলে যোগ করেন ৪০ রান। তার ব্যাট থেকে আসে ১৬ বলে ১৯ রান। এ ছাড়া বল হাতে মেহেদী ২ উইকেট নিয়ে হয়েছেন ম্যাচসেরা।

 

হৃদয়ের পর সাজঘরে আফিফ, চাপে বাংলাদেশ

লিটন দাসের সঙ্গে জুটি গড়ে এগোচ্ছিলেন তাওহীদ হৃদয়। হাঁকিয়েছেন  দারুণ এক ছয়। সিঙ্গেলস-ডাবলসে খেলার চেষ্টা করছিলেন এই ডানহাতি ব্যাটার। থিতু হওয়ার পর ভুল করে বসলেন। এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে মিস করেন টামিং। এক্সট্রা কাভারে ক্যাচ তুলে দেন সাউদির হাতে। তার আউটে ভেঙে যায় ২৯ বলে ২৯ রানের জুটি। ক্রিজে লিটনের সঙ্গী আফিফ ক্রিজে এসেই ফিরলেন। সাউদিকে পুল করতে গিয়ে টাইমিং মিস করেন। বল উঠে যায় শূন্যে, ক্যাচ নেন নিশাম। এবার লিটনের সঙ্গী হলেন শেখ মেহেদী।

 

ছোট্ট ক্যামিও খেলে ফিরলেন সৌম্য

ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে নিজের জাত চিনিয়েছেন সৌম্য সরকার। টি-টোয়েন্টি সিরিজেও সেই ধারা ধরে রাখলেন। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ২ চার ও ১ ছয়ে ১৫ বলে ২২ রানের ছোট্ট ক্যামিও খেলেছেন এই ব্যাটার। তবে ঝলক দেখালেও ইনিংস বড় করতে পারেননি।বেন সিয়ার্সকে চার মারার পরের বলেই আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন তিনি।

 

দারুণ ইনিংসের বার্তা দিয়ে সাজঘরে শান্ত 

ক্রিজে এসে দারুণ চারের মারে রানের খাতা খোলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ব্যাট হাতে বলাদেশ অধিনায়ককে দেখা যাচ্ছিলো সাবলীল। কিন্তু থিতু হওয়ার পরও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। নিশামকে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন স্যান্টনারের হাতে, এক্সট্রা কাভারে। ৪টি চারের মারে ১৪ বলে ১৯ রান করেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। ক্রিজে লিটনের সঙ্গী সৌম্য।

 

শুরুতেই রনির উইকেট হারালো বাংলাদেশ

সাউদিকে দারুণ ছয়ে দুর্দান্ত ইনিংসের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন রনি তালুকদার। কিন্তু হলো না। দ্বিতীয় ওভারে মারতে গিয়ে ফেরেন সাজঘরে। অফ স্ট্যাম্পে করা লেন্থ বল উড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন রনি, ব্যাটে-বলে এক হয়নি। বল উঠে যায় আকাশে। সহজ ক্যাচ হাতছাড়া করেননি সাউদি। ১০  রানে আউট হন রনি। ক্রিজে লিটনের সঙ্গী শান্ত।

ইতিহাস গড়তে বাংলাদেশের প্রয়োজন ১৩৫

তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সামনে ১৩৫ রানের লক্ষ্য দাঁড় করিয়েছে স্বাগতিক নিউ জিল্যান্ড।টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের বোলিং তোপের পরও ঘুরে দাঁড়িয়েছে তারা। জিমি নিশামের ৪৮ ও মিচেল স্যান্টনারের ২৩ রানের দুটি কার্যকর ইনিংসে ভর করে ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৩৪ রান সংগ্রহ করেছে কিউইরা। এর আগে বাংলাদেশ নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে কখনো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জেতেনি। এবারই নাজমুল হোসেন শান্তর দলের সুযোগ, ইতিহাস গড়ার।

বাংলাদেশের পক্ষে শরিফুল ইসলাম সর্বোচ্চ ৩টি, শেখ মেহেদী ও মোস্তাফিজুর রহমান সমান ২টি করে উইকেট শিকার করেন। ১টি করে উইকেট নেন রিশাদ হোসেন ও তানজিম হাসান সাকিব।

দুই জীবনের পর সাজঘরে সাউদি

প্রথমটি একটু কঠিনই ছিল। সার্কেলের ভেতর থার্ডম্যান অঞ্চলে বল উঠে যায় আকাশে। রিশাদ পেছনে যেয়েও বলের কাছে যেতে পারেননি।  এক বল এবার সহজ ক্যাচ ভুল বোঝাবুঝিতে হাতছাড়া করেন রিশাদ-রনি তালুকদার। এক্সট্রা কাভারে যখন বল আকাশে, তখন রনি-রিশাদ দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকেন। বল পড়ে যায় মাটিতে। ক্ষিপ্ত হন শরিফুল। পরের ওভারে আর বাঁচতে পারেননি। মোস্তাফিজকে মারতে গিয়ে সাউদি ধরা পড়েন আফিফের হাতে। ১০ বলে ৮ রান করেন তিনি।

মোস্তাফিজকে ছক্কায় বল হারানোর পর আউট নিশাম

আগের ওভারে রিশাদকে পরপর ছয়-চারে ১৬ ওভারে দলীয় শতারন পূর্ণ করেন নিশাম। পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে ফ্রন্ট ফুটে এসে ডিপ স্কয়ার লেগে হাঁকান বিশাল ছয়। হারিয়ে যায় বল। আম্পায়ার আনান অন্য বল। তাতেই যেন কপাল খুলে মোস্তাফিজের। ওয়াই ইয়র্কার দিতে গিয়ে মোস্তাফিজ ফুল টস দিয়ে বসেন। জোরে হাঁকান নিশাম। ঠিকঠাক টাইমিং হয়নি। বল চলে যায় ডিপ পয়েন্টে দাঁড়ানো আফিফের হাতে। ২৯ বলে ৪৮ রান করেন নিশাম। ক্রিজে মিলনের সঙ্গী সাউদি।

নিশাম-স্যান্টনারের প্রতিরোধ ভাঙলেন শরিফুল

মেহেদী-শরিফুল-রিশাদে ৫০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল নিউ জিল্যান্ড। সেই ধাক্কা সামলে নিশাম-স্যান্টনারের ব্যাটে প্রতিরোধের চেষ্টা করছিলেন। তখনি অবতার হয়ে আসেন শরিফুল। ফেরান মিচেল স্যান্টনারকে। শরিফুলের আউটসাইড অফের বল সুইপ করতে চেয়েছিলেন স্যান্টনার। টাইমিংয়ে গড়বড় হওয়ায় বল চলে যায় মিড উইকেটে। বল নিচু হয়ে আসলেও সেখানে থাকা সৌম্য অসাধারণ দক্ষতায় বল তালুবন্দি করেন। ২২ বলে ২৩ রান করে ফেরেন স্যান্টনার। তার আউটে ভাঙে ৩১ বলে ৪১ রানের জুটি। ক্রিজে নিশামের সঙ্গী মিলনে।

চাপম্যানকে বিদায় করলেন রিশাদ

এবার আক্রমণে রিশাদ হোসেন। আউট সাইড অফে স্লাইডারে ইনসাইড আউট শট খেলতে চেয়েছিলেন চাপম্যান। ব্যাটে-বলে এক হয়নি। বল চলে যায় ডিপ কাভার পয়েন্টে তানজীম হাসান সাকিবের হাতে। ১৯ বলে ১৯ রান করেন তিনি। তার আউটে ভেঙে যায় ২৮ বলে ৩০ রানের জুটি। ক্রিনে নিশামের সঙ্গী স্যান্টনার।

মেহেদী-শরিফুলে ধুঁকছে নিউ জিল্যান্ড

আউটসাইড অফে পিচড হওয়া বল টেনে নিয়ে মারতে চেয়েছিলে ডেরিল মিচেল। ভাগ্য সহায় হয়নি। বল ব্যাটে লেগে ভেঙে দেয় উইকেট। ধাক্কা সামলে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করছিলেন মিচেল, কিন্তু আর হয়নি। ১৫ বলে ১৪ রান করেন এই ব্যাটার। ২০ রানে ৪ উইকেট হারালো নিউ জিল্যান্ড। ক্রিজে মার্ক চাপম্যান-জেমস নিশাম। সমান দুটি করে উইকেট নেন মেহেদী-শরিফুল।

শরিফুলের জোড়া আঘাত, টালমাটাল নিউ জিলান্ড

শরিফুলের করা দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বল। লেন্থ ডেলিভারি বেরিয়ে যাচ্ছিলো অফ দিয়ে। খোঁচা দিয়ে বসেন ফিন অ্যালেন। স্লিপে দারুণ ক্যাচ নেন সৌম্য সরকার। শূন্য রানে সাজঘরে ফেরেন এই ব্যাটার। অ্যালেনের ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই শরিফুলের দ্বিতীয় বলে ফেরেন গ্লেন ফিলিপস। বল পায়ে লাগলেও সাড়া দেননি আম্পায়ার। রিভিউ নিলে আসে বাংলাদেশের পক্ষেই। । পরপর দুইজনকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন শরিফুল, তবে শেষ পর্যন্ত হ্যাটট্রিক হয়নি। মাত্র ১ রানে ২ উইকেট নেন এই তরুণ পেসার।

শুরুতেই শেইফার্টকে ফেরালেন মেহেদী
প্রথম ওভারেই শেখ মেহেদীকে আক্রমণে আনলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। আক্রমণে এসে প্রথম তিন বলেই দুই কিউই ব্যাটারের পরীক্ষা নিলেন এই স্পিনার। চতুর্থ বলেই ধরা খেলেন টিম শেইফার্ট। জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন শেইফার্ট। অফ স্টাম্পের বাইরে থেকে একটু টার্ন করে ভেতরে ঢুকছিল বলটি, একটু নিচুও হয়েছিল। শেইফার্ট নাগাল পাননি সেটির।

তানজিমের অভিষেক
বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হচ্ছে পেসার তানজীম হাসান সাকিবের। দলে জায়গা হয়নি মেহেদী হাসান মিরাজের। তিন পেসার মোস্তাফিজ, তানজীম ও শরীফুলের সঙ্গে খেলবেন লেগ স্পিনার রিশাদ ও অফ স্পিনার শেখ মেহেদী।

বাংলাদেশ একাদশ: নাজমুল হোসেন (অধিনায়ক), সৌম্য সরকার, লিটন দাস, রনি তালুকদার, তাওহিদ হৃদয়, মোস্তাফিজুর রহমান, আফিফ হোসেন, মেহেদী হাসান, তানজিম হাসান, শরীফুল ইসলাম, রিশাদ হোসেন

নিউ জিল্যান্ড একাদশ: মিচেল স্যান্টনার (অধিনায়ক), ফিন অ্যালেন, মার্ক চ্যাপম্যান, অ্যাডাম মিলনে, ড্যারিল মিচেল, জিমি নিশাম, গ্লেন ফিলিপস, বেন সিয়ার্স, টিম সেইফার্ট, ইশ সোধি ও টিম সাউদি।

টস
ম্যাচে টস জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। নেপিয়ারের ম্যাকলিন পার্কে বেলা ১২টা ১০ মিনিটে ম্যাচটি শুরু হবে।

বাংলাদেশের নজরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি
আসছে বছর যুক্তরাষ্ট্র-ওয়েস্ট ইন্ডিজে মাঠে গড়াবে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণের এই বিশ্বকাপ। অধিনায়ক সাকিব না থাকলেও নিউ জিল্যান্ড থেকেই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কম্বিনেশন কেমন হবে, সেটির কাজ শুরু হবে। বিশ্বকাপ প্রস্তুতির শুরুতে কিউইদের বিপক্ষে কঠিন চ্যালেঞ্জ নিতে মুখিয়ে আছে লাল-সবুজের দল।

ওয়ানডেতে নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে জয়ের ইতিহাস ছিল না। ২৩ ডিসেম্বর নেপিয়ারে হারের বৃত্ত ভেঙে দাপুটে জয়ের দেখা পায় বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতেও ঠিক। ৯ ম্যাচ খেলে সবকটিতে মাঠ ছাড়তে হয়েছে হার নিয়ে।

অধিনায়ক শান্ত বলেন, ‘আরেকটি কঠিন সিরিজ খেলতে মুখিয়ে আছি। বাংলাদেশ তিন ম্যাচেই ভালো খেলেছে, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক সিরিজ ছিল। শেষ ম্যাচে বিশেষ করে, পিচে সহায়তা ছিল একটু, তারা দারুণ বোলিং করেছে, ভালো জায়গায়। জয়টা তাদের প্রাপ্য ছিল।’

পরিসংখ্যানের হিসেবনিকেশ
সবশেষ ৫ টি-টোয়েন্টির একটিতে জয় বাংলাদেশের। বাকি চারটিই জিতেছে কিউইরা। বাংলাদেশ যে জয়টি পেয়েছিল সেটি ২ বছর আগে মিরপুরের মাটিতে। দুদল সবশেষ মুখোমুখি হয়েছিল ১ বছর আগে ক্রাইস্টচার্চে।

এখন পর্যন্ত ১৭টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হয়েছে দুদলের মধ্যে। যেখানে বাংলাদেশের দখলে রয়েছে ৩ জয়। আর বাকি ১৪ ম্যাচেই নিউজিল্যান্ডের জয় এসেছে। ফলে পরিসংখ্যানের বিচারে অনেকটাই এগিয়ে থাকবে স্বাগতিকরা।