সুন্দরবনের নদ-নদীতে চিংড়ি রেণু আহরণ করে জীবিকা যাদের


admin প্রকাশের সময় : নভেম্বর ২০, ২০২৩, ৩:৪৩ পূর্বাহ্ন /
সুন্দরবনের নদ-নদীতে চিংড়ি রেণু আহরণ করে জীবিকা যাদের

বিশ্বের একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। উপকূলীয় এই এলাকার অধিকাংশ মানুষ কোনো না কোনো ভাবে এই বনের ওপর নির্ভরশীল। বছরজুড়ে বনের মধ্যে বয়ে চলা নদ-নদীতে মাছ ধরার বৈধ পাশ, পোনা আহরণ, মাছ ধরে ও শুটকি বানিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে লাখো মানুষ। যাদের একটি বড় অংশই হচ্ছেন নারী। 

প্রতিনিয়ত লড়াই-সংগ্রাম করে বাঁচতে হয় উপকূলের মানুষদের। নারী-পুরুষের দিনরাত সংগ্রামে জোগাড় হয় দু’মুঠো খাবার। বেশির ভাগেরই জানা নেই তাদের অধিকারের কথা। নোনাজলে রয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকিও। তারপরও জীবিকার সন্ধানে সুন্দরবনের নদ-নদীতে চিংড়ি রেণু আহরণ করছেন সাতক্ষীরা উপকূলের ১৫-২০ সহস্রাধিক নারী।

কর্মসংস্থানের অভাবে এসব নারী ঝুঁকি নিয়ে জীবিকা অর্জন করছেন। কখনো বাঘ, আবার কখনো কুমিরের আক্রমণের শিকারও হতে হয় তাদের। তাছাড়া দীর্ঘ সময় লবণ পানিতে থাকায় এসব নারীর জরায়ুসহ শারীরিক অন্যান্য সমস্যাও হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

মৎস্য অধিদপ্তর বলছে, সমুদ্রগামী জেলেদের সহযোগিতা করা হলেও সুন্দরবনে জেলেদের সহযোগিতার ব্যবস্থা নেই। তবে সুন্দরবনের জেলেদের ভিজিএফ’এর আওতায় আনা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়ন ও পাশের পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালীনি, মুন্সিগঞ্জ এবং রমজান ইউনিয়নের অন্তত ১০ হাজার নারী প্রতিদিন সুন্দরবনের নদ-নদীতে চিংড়ি রেণু সংগ্রহ করেন।

সুন্দরবন সংলগ্ন চকবারা গ্রামের গৃহবধূ আকলিমা খাতুন ও খাদিজা বেগম জানান, বনে বাঘ, জলে কুমির জেনেও উপকূলীয় খোলপেটুয়া নদীতে ৮-১০ বছর ধরে তারা চিংড়ি রেণু আহরণ করে আসছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত নদীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে জাল টেনে একেকজন দেড় শত থেকে দুইশত টাকা উপার্জন করেন, যা তাদের সংসারে সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। এলাকায় চিংড়ি ঘের হওয়ার কারণে কৃষিকাজ তেমন নেই বললেই চলে। এ কারণে উপকূলীয় এলাকার পুরুষরা কাজ হারিয়ে দিন দিন বেকার হয়ে পড়ছে।

শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান জিএম মাকসুদুল আলম জানান, সুন্দরবনের উপকূল এলাকার নদ-নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে লাখো মানুষ। গাবুরা ইউনিয়নে কমপক্ষে চার হাজার হতদরিদ্র নারী সুন্দরবনের খোলপেটুয়া, কপোতাক্ষ ও কালিঞ্চি নদীতে চিংড়ি এবং পারশে মাছের রেণু আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। রেণু পোনা আহরণ করতে গিয়ে অনেকে বাঘ ও কুমিরের আক্রমণের শিকারও হন।

তিনি আরও জানান, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা কর্মসংস্থানের অভাবে এসব নারী জীবিকা অর্জন করছেন।

সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রহিমা খাতুন জানান, দীর্ঘ সময় কোনো নারী যদি নদীর লবণ পানিতে ভিজে থাকেন, তবে তার জরায়ুতে ইনফেকশন হতে পারে। তাছাড়া অনিয়মিত মাসিক বা জরায়ুর ক্ষত বা শক্ত হয়ে যেতে পারে।

তিনি আরও জানান, এ ছাড়া অন্যান্য চর্ম বা পানিবাহিত রোগও হতে পারে। মাঝেমধ্যে সুন্দরবন এলাকা থেকে এসব নারী চিকিৎসা নিতে এলে তাদের দীর্ঘক্ষণ নোনা পানিতে না থাকার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়।

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিছুর রহমান জানান, সমুদ্রগামী জেলেদের সহযোগিতা করা হলেও সুন্দরবনে জেলেদের সহযোগিতার ব্যবস্থা নেই। তবে সুন্দরবনের জেলেদের ভিজিএফ’এর আওতায় আনা উচিত বলে মনে করেন তিনি