সাকিবের মনোনয়ন ফরম কেনায় যা বলছেন মাগুরা আ.লীগ নেতারা


admin প্রকাশের সময় : নভেম্বর ২১, ২০২৩, ৭:০৯ পূর্বাহ্ন /
সাকিবের মনোনয়ন ফরম কেনায় যা বলছেন মাগুরা আ.লীগ নেতারা

সাকিব আল হাসান রাজনীতিতে নামতে পারেন-এমন গুঞ্জন চলে আসছে অনেকদিন ধরেই। তবে এবার তিনি তিনটি আসন মাগুরা-১, মাগুরা-২ ও ঢাকা-১০ আসনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করায় নড়েচড়ে বসেছেন মাগুরা দুটি আসনের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

সাকিব আল হাসান আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহের পর মাগুরায় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। সবার একটাই প্রশ্ন সাকিব আল হাসান মাগুরার কোন আসনে মনোনয়ন পাচ্ছেন? 

গত সংসদ নির্বাচনের সময় থেকেই সাকিবের রাজনীতিতে আসার খবর চাউর হয়। ২০১৮ সালে তিনি মাগুরা-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কেনার আগ্রহ দেখিয়েও শেষ মুহূর্তে নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নেন।

সাকিবের পক্ষে তার একজন প্রতিনিধি গত শনিবার (১৮ নভেম্বর) রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন।

মাগুরা শহরের সাহাপাড়ার ছেলে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান নির্বাচনে অংশগ্রহণে তার আগ্রহের বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট। মাগুরায় রাজনীতির মাঠে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছেন তিনি। সাকিবের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের খবর ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন মহলে নানা প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও পক্ষে-বিপক্ষে মন্তব্য করেন অনেকে। জেলার দুটি আসনের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কেউ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে সতর্ক থাকছেন কেউ আবার রাখঢাক ছাড়াই কথাই বলছেন।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মাগুরার আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, সাকিবকে তারা কখনো স্থানীয় রাজনীতি বা এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হতে দেখেননি। তবে মনোনয়নের বিষয়ে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই শেষ কথা। তবে এ বিষয়ে সাকিবের পরিবারের কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

মাগুরা সদর উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন, শালিখা ও মহম্মদপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত মাগুরা-২ আসনের জন্যও মনোনয়ন ফরম কিনেছেন সাকিব। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার। আলোচনা চলছে সেখানেও। জানতে চাইলে শালিখা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শ্যামল কুমার দে  বলেন, মনোনয়নের বিষয়তো নেত্রীর হাতে। নেত্রী যাকে দেবেন,তাকে নিয়েই আমাদের নির্বাচন করতে হবে। অন্য জায়গার কথা তো বলতে পারব না, এই শালিখা উপজেলায় রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডে বা কারও সঙ্গে সাকিবের কোনো সম্পর্ক আছে বলে আমার জানা নেই। তবু আকাশ থেকে কোনো তারা এনে যদি এখানে দিয়ে ফেলে, আমরা তা–ই নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়ব। কোনো অসুবিধা নেই।

অন্যদিকে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাগুরার দুটি আসনেই আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ বর্তমান সংসদ সদস্যদের ওপর ক্ষুব্ধ। তারা যার যার জায়গা থেকে প্রার্থীর পরিবর্তন চাইছেন। তবে তারা কেউ এখনই সাকিবের পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নিচ্ছেন না। তারা মনে করছেন, সাকিব মাগুরার যেকোনো একটি আসনে নৌকার প্রার্থী হলে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের বিপুল সমর্থন পাবেন।

মাগুরায় সাকিব আল হাসানের বাড়ি শহরের সাহাপাড়ায়। এটি মাগুরা-১ আসনের মধ্যে। সদর উপজেলার একটি পৌরসভা, নয়টি ইউনিয়ন ও শ্রীপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর। এই আসনের আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বেশির ভাগই বর্তমান সংসদ সদস্যের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এই নেতাদের কাছে সাকিব আল হাসানের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করাটা অনাকাঙ্ক্ষিত বলে জানান জেলা আওয়ামী লীগের বড় একটি পক্ষ।

সাকিবের মনোনয়ন ফরম কেনার বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ফ ম আবদুল সত্তাহ  বলেন, মনোনয়ন যে কেউ কিনতেই পারেন। কিন্তু আমরা মনে করি, দলের জন্য যারা দীর্ঘদিন ধরে নিবেদিতভাবে কাজ করেছেন, ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যাদের অবস্থান, এমন মানুষকেই মনোনয়ন দেওয়া উচিত। সাকিব কখনো জনগণের সঙ্গে মাঠে কাজ করেছে বা কোনো দলের রাজনীতি করেছে বলে তো শুনিনি। নেত্রী ভালো বুঝবেন কাকে মনোনয়ন দিলে ভালো হয়, তার কাছে সব তথ্যই আছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ কুন্ডু বলেন, বিষয়টি তিনি গণমাধ্যম থেকে জেনেছেন। যে কারণে এ ব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

মাগুরা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাক আব্দুল মান্নান বলেন, সাকিব বা তার পরিবারের কেও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। আওয়ামী লীগের সমর্থক নন। ব্যক্তিগতভাবে সাকিবের আওয়ামী লীগের প্রতি ন্যূনতম কোনো অবদান নেই। বরং তারা আওয়ামী বিরোধী পরিবার হিসেবে পরিচিত। আব্দুল মান্নান তার এই মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

মাগুরা যুবলীগের আহ্বায়ক ফজলুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় রাজনৈতিক দল, যে কেউ মনোনয়ন ফরম কিনতে পারেন। তবে মাগুরা-১ আসনের বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর মানুষের কল্যাণে কাজ করে নিজেকে গণমানুষের নেতায় পরিণত করেছেন। এখানে সাইফুজ্জামান শিখরের বিকল্প কোনো প্রার্থী নেই। গোটা আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন সাইফুজ্জামান শিখরের নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে।

মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান বলেন, যে কেউ মনোনয়ন ফরম কিনতে পারেন। তবে সাকিবের কোনো মাঠকর্মী নেই। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সাকিব ভোটের মাঠে হারিয়ে যাবে।

সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান  বলেন, সে যে মনোনয়ন ফরম কিনছে, এটা আমি, আমার সভাপতি বা দলের কেউ জানে বলে আমার মনে হয় না। আমি ৩৪ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই সময়ে আমি কখনো সাকিব বা তার পরিবারের কাউকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা দেখিনি। তাদের এই দলের প্রতি কোনো অবদান আছে বলেও মনে হয় না।

শ্রীপুর উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি শ্রীকোল ইউনিয়ন পরিষদের  চেয়ারম্যান কুতুবুল্লাহ হোসেন মিয়া বলেন, সাকিবের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন তারকা প্রার্থী হলে তো ভালোই হবে। সবাই তো আর রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকেন না। নেত্রী যদি চান, এখানে তো কোনো সমস্যা দেখি না। কারণ, এখানে প্রার্থী পরিবর্তন হলে ভোটের ফল আওয়ামী লীগের পক্ষে যাবে।

শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমাউনূর রশীদ মুহিত বলেন, আমার মনে হয় সাকিবের আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদও নেই। তাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মুখ ফিরিয়ে নেবেন।

সাকিবের একজন আত্মীয় নাম প্রকাশ না করার শর্তে  বলেন, সাকিব আল হাসান বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তিনি দেশে ফিরে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর বিষয়টি স্পষ্ট হবে। আবার  সম্প্রতি সাকিব আল হাসানের নতুন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে (বিএনএম) যোগদানের গুঞ্জন ওঠে। এ বিষয়ে জানতে  সাকিবের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

সাকিবের মনোনয়ন সংগ্রহের বিষয়ে তার ছোট বেলার ক্রিকেট গুরু সাদ্দাম হোসেন গোর্কির কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সাকিবের বাবা সাবেক ফুটবলার বর্তমানে ব্যাংকার মাশরুর রেজা কুটিল এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সাকিব আল হাসানের মনোনয়ন কেনা নিয়ে মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর বলেন, অরাজনৈতিক ও বিভিন্ন পেশার মানুষ রাজনীতির প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন এটা রাজনীতির ইতিবাচক একটি বিষয়। আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী দল থেকে নির্বাচন করতে চাচ্ছে এটাও একটি ইতিবাচক বিষয়। ছোট ভাই (সাকিব) মনোনয়ন কিনেছে-সবাই কিনতে পারে। তবে যাচাই-বাছাই করে মনোনয়ন দেবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।