অনলাইনে হ্যাকারদের আনাগোনা নতুন কিছু নয়। তাদের উদ্দেশ্য থাকে মূলত আপনার অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তাজনিত যেকোনো দুর্বলতার সুযোগ নেয়া।
পাসওয়ার্ড চুরি করে কিংবা ডাউনলোড করা কোনো ক্ষতিকর অ্যাপ বা সফটওয়্যারের মাধ্যমে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে থাকে হ্যাকাররা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কম্পিউটারের প্রসেসিং পাওয়ারেরও দখল নিয়ে নেয়।
অন্যান্য সব অ্যাপ্লিকেশনের মতো হ্যাকাররা ফেসবুককেও টার্গেট করে থাকে। আর একবার নিরাপত্তার দেয়াল ভেদ করতে পারলে সহজেই আপনার হাত থেকে তারা অ্যাকাউন্ট নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিতে পারে। ব্যবহারকারীদের জন্য এ ধরনের অভিজ্ঞতা রীতিমতো উদ্বেগজনক।
আপনার অ্যাকাউন্টটি হ্যাক হয়েছে বলে মনে হলে নির্ধারিত কিছু পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমে আপনি পুনরায় অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে পারেন। আর একবার অ্যাকাউন্ট ফেরত পাওয়ার পর হ্যাকারদের হাত থেকে তা নিরাপদ রাখতে আপনার সিকিউরিটি সেটিংস রিভিউ করাও জরুরি।
হ্যাকিংয়ের শিকার হলে কীভাবে পুনরায় অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ পাওয়া যায়, আসুন জেনে নেই –
আপনি যদি আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে না পারেন, তার কারণ হতে পারে এটি যে হ্যাকার আপনার লগড ইন সেশন মুছে দিয়েছে বা ‘লগইন ডিটেইলস’এ পরিবর্তন করেছে। এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে www.facebook.com/hacked লিংকের মাধ্যমে আক্রমণের শিকার অ্যাকাউন্টের তথ্য দ্রুত রিপোর্ট করুন।
ফেসবুক পরবর্তীতে আপনার অ্যাকাউন্টের সাথে সম্পর্কিত ইমেইল এড্রেস বা ফোন নম্বর ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট রিকভার করতে সহায়তা করবে।
আপনি যদি সেটিংসের ‘চুজ ফ্রেন্ডস টু কনট্যাক্ট ইফ ইউ গেট লকড আউট’ অপশনটি চালু করে রাখেন, তাহলে পরবর্তীতে এই ফাংশন ব্যবহার করে আপনার প্রয়োজনে অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধার করতে পারবেন। এই ফাংশনের মাধ্যমে আপনি ৩-৫ জন বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে বাছাই করতে পারবেন, যারা অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে ভবিষ্যতে সহায়তা করবে।
এই ফাংশনটি চালু করতে হলে আপনাকে লগইন পেজের ‘ফরগটেন অ্যাকাউন্ট?’ অপশন নির্বাচন করতে হবে। এরপর ইমেইল বা ফোন নম্বর দিয়ে আপনার অ্যাকাউন্টটি সার্চ করতে হবে। অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাওয়ার পর আপনি আপনার পূর্বনির্ধারিত বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের নাম প্রবেশের সুযোগ পাবেন। তাদের কাছে এরপর একটি অ্যালার্ট এবং লিংক পৌঁছে যাবে, যাতে কেবল তারাই প্রবেশ করতে পারবেন। আপনার নির্বাচিত ব্যক্তিরা ওই লিংকে প্রবেশের একটি রিকভারি কোড পাবেন, যা তারা আপনাকে জানাবেন এবং আপনি এর মাধ্যমে আবার নিজ অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে পারবেন।
অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধার হয়ে যাওয়ার পর সিকিউরিটি অ্যান্ড লগইন সেটিংসে গিয়ে পাসওয়ার্ড পরবর্তন করা অথবা ইউজ টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন বা টুএফএ চালু করা খুবই জরুরি। এক্ষেত্রে আপনার অ্যাকাউন্টের ডেটায় অ্যাক্সেস রয়েছে, এমন যেকোনো সন্দেহজনক বা ক্ষতিকর অ্যাপ্লিকেশন মুছে দেয়ার পরামর্শ দেয় ফেসবুক। আপনি সেটিংসের অ্যাপস অ্যান্ড ওয়েবসাইট অপশন থেকে বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে না এমন, বা আপনার পরিচিত নয় এমন অ্যাপস খুঁজে বের করে তা রিমুভ করে দিতে পারেন।
আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হলে তা দ্রুত আপনার বন্ধুদের জানিয়ে দিয়ে তাদের সাবধান করতে উৎসাহিত করে ফেসবুক। এর মাধ্যমে আপনি আপনার বন্ধুদের ওই অ্যাকাউন্ট ফিরে পাওয়ার আগ পর্যন্ত সেটি থেকে পাঠানো যেকোনো লিংক বা পোস্টে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকতে বলতে পারেন।
এছাড়া, আপনি আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সেটিংসের ‘লগইনস অ্যান্ড সিকিউরিটি’ অপশনের ‘গেট অ্যালার্টস অ্যাবাউট আনরিকগনাইজড লগইনস’-এ সাইন আপ করে রাখতে পারেন। অপশনটি নির্বাচিত থাকলে অপরিচিত যেকোনো ডিভাইস থেকে অ্যাকাউন্টে লগইন করা হলে ফেসবুক আপনাকে সাবধান করবে এবং অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখতে প্রয়োজনীয় ধাপগুলো অনুসরণে সহায়তা করবে।
ফেসবুকসহ যেকোনো নতুন অ্যাপ ও প্ল্যাটফর্মে ক্ষতিসাধনের জন্য হ্যাকাররা প্রতিনিয়ত নিজেদের কৌশল বদলাতে থাকে। তাই সবসময় সতর্ক থাকা, সিকিউরিটি চেক এর মাধ্যমে কার্যকরভাবে অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা জোরদার করা ও হ্যাক হলে কী করতে হবে, তা জেনে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার মতামত লিখুন :